তিতাস একটি নদীর নাম সিনেমাটির কথা বেশ মনে আছে। দেখেছিলাম অনেকদিন আগে। মনে মনে ইচ্ছা ছিল একটি রিভিউ লেখার। তবে আমি ঠিক গুছিয়ে লিখতে পারিনা, তবুও লিখতে চেষ্টা করছি। তিতাস একটি নদীর নাম সিনেমাটির কথা উঠলেই প্রথমে যে নামটি উচ্চারিত হয় তিনি হলেন বাংলার কিংবদন্তি পুরুষ ঋত্বিক কুমার ঘটক। তিতাস একটি নদীর নাম সিনেমাটি বানানোর কোন ইচ্ছা কিন্তু ঋত্বিক ঘটকের ছিল না। কারন তিনি এই লেখাটির সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। আমাদের মধ্যে অনেকেই জানি না গল্পটির রচয়িতা কে? অদ্বৈত মল্লবর্মণ নামের একজন সাংবাদিকের হাত দিয়ে এসেছে এই অসাধারন সিনেমাটির কাহিনী। তার মৃত্যুর কয়েক বছর পরে এই উপন্যাসটি বই আকারে বের হয়।একটিমাত্র উপন্যাস লিখে তিনি বাংলা সাহিত্যে চির অমর হয়ে আছেন। ঋত্বিক ঘটক দৈবক্রমে উপন্যাসটি হাতে পান এবং বইটি পড়ে বসা অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেন চিত্রনাট্য লেখার। কথিত আছে তিনি তার বোনের বাসায় সাদা কাগজ না পেয়ে বোনের সাদা শাড়িতে এই উপন্যাসের চিত্রনাট্য লিখতে বসে যান। ২০০৭ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউটের জরিপে দর্শোক, চলচ্চিত্র সমালোচকদের ভোটে “তিতাস একটি নদীর নাম” সবার সেরা দশ বাংলা চলচ্চিত্রের মধ্যে সেরা স্থান অধিকার করে। সিনেমাটিতে ঋত্বিক ঘটক নিজেও অভিনয় করেছেন ছোট একটি চরিত্রে। পরিচালক ঋত্বিক ঘটক প্রথিভা চিনতে ভুল করেননি। রোজী সামাদ বাসন্তী চরিত্রে এতটাই বাস্তবসম্মত কাজ করেছেন যে দর্শোকদের মনেই হবে না তিনি অভিনয় করছেন। ওশন জামিলের অভিনয় ছিল অনবদ্য। ঋত্বিক ঘটক গোলাম মোস্তফার কাছ থেকে সেরাটা আদায় করতে পেরেছিলেন। প্রতিভা কি তা বুঝিয়েছেন গোলাম মোস্তফা তার শক্তিশালি অভিনয় ক্ষমতা দিয়ে। এই ছবির সবচেয়ে মজার বিষয় হলো টাইটেল মিউজিক। ঋত্বিক ঘটক ছবিটিতে টাইটেল মিউজিক ব্যবহার করেন আরিচা ঘাটের এক বৃদ্ধ ফকিরের গাওয়া গান। বাংলাদেশের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয়ের সাবলিলতা, দক্ষতা এবং কাজের প্রতি নিষ্ঠা ঋত্বিক ঘটকে মুগ্ধ করেছিল। তিনি জোর গলায় বলেছিলেন, বাংলাদেশের শিল্পী ও কলাকুশলীদের দ্বরা যেকোন ভালো ছবি তৈরি সম্ভব”। তিতাস পারের কথা যাদের জানা নেই তারা দেখতে পারেন ছবিটি।